চুল মানুষের সৌন্দর্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বাস্থ্যবান, ঝলমলে চুল শুধু আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না, বরং ব্যক্তিত্বেও আলাদা মাত্রা যোগ করে। কিন্তু হেয়ার ওয়াশের সময় কিছু সাধারণ ভুলের কারণে চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। ভুল নিয়মে শ্যাম্পু করার কারণে চুল রুক্ষ, ড্রাই ও ড্যামেজড হতে পারে। আসুন, জেনে নিই এমন ১০টি ভুল সম্পর্কে যা চুলের ক্ষতি করছে এবং কীভাবে সেগুলো এড়িয়ে চলা যায়।
১. শ্যাম্পুর আগে চুল ভিজিয়ে না নেওয়া
শ্যাম্পু ব্যবহারের আগে চুল ভালোভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে না নিলে শ্যাম্পু সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। চুল শুকনো অবস্থায় শ্যাম্পু করলে এটি চুল ও স্ক্যাল্পে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে না। সেই সাথে চুল ভিজিয়ে না নেওয়ার ফলে শ্যাম্পুর রাসায়নিক উপাদান সরাসরি চুলে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সমাধান: শ্যাম্পুর আগে চুল ও স্ক্যাল্প ভালোভাবে ভিজিয়ে নিন। এতে শ্যাম্পু সহজে ফেনা তৈরি করবে এবং চুল পরিষ্কার হবে।
২. অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা
অনেকেই মনে করেন, বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল বেশি পরিষ্কার হবে। তবে এটি একটি বড় ভুল। অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায় এবং চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে।
সমাধান: চুলের ঘনত্ব ও দৈর্ঘ্য অনুযায়ী পরিমাণমতো শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সাধারণত একটি মুদ্রার আকারে শ্যাম্পু নিলেই যথেষ্ট।
৩. স্ক্যাল্পে শ্যাম্পু ম্যাসাজ না করা
শুধুমাত্র চুলের লেন্থে শ্যাম্পু ব্যবহার করলে স্ক্যাল্প পরিষ্কার হয় না। অথচ চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে স্ক্যাল্পের পরিচ্ছন্নতার উপর।
সমাধান: শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্পে আঙুলের সাহায্যে আলতো ম্যাসাজ করুন। এতে স্ক্যাল্প পরিষ্কার হবে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
৪. মানানসই শ্যাম্পু ব্যবহার না করা
স্ক্যাল্প ও চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। ভুল ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সমাধান: নিজের স্ক্যাল্প ও চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু বেছে নিন। যেমন, তেলতেলে স্ক্যাল্পের জন্য ক্লারিফাইং শ্যাম্পু এবং ড্রাই স্ক্যাল্পের জন্য ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু ভালো।
৫. চুল থেকে শ্যাম্পুর ফেনা সঠিকভাবে না ধোয়া
শ্যাম্পু করার পর যদি চুল থেকে ফেনা পুরোপুরি ধুয়ে না ফেলা হয়, তাহলে চুল দ্রুত ড্যামেজড হয়ে যায়। চুলে জমে থাকা শ্যাম্পু স্ক্যাল্পে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে এবং খুশকির সমস্যা বাড়ায়।
সমাধান: শ্যাম্পু করার পর পর্যাপ্ত পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন যতক্ষণ না চুল থেকে ফেনা সম্পূর্ণ দূর হয়।
৬. চুলের লেন্থে সরাসরি শ্যাম্পু ব্যবহার
চুলের লেন্থ তুলনামূলকভাবে কম ময়লা হয়। তবুও অনেকেই চুলের পুরো দৈর্ঘ্য জুড়ে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন। এতে চুলের ড্রাইনেস ও আগা ফাটার প্রবণতা বেড়ে যায়।
সমাধান: শুধু স্ক্যাল্পে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। চুলের লেন্থ স্ক্যাল্পের ফেনা দিয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৭. কন্ডিশনার ব্যবহার না করা
অনেকেই শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না। কন্ডিশনার চুলকে নরম ও মসৃণ করতে সাহায্য করে। এটি চুলে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা যোগায় এবং চুলের ড্রাইনেস দূর করে।
সমাধান: প্রতিবার শ্যাম্পুর পরে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। তবে কন্ডিশনার স্ক্যাল্পে লাগাবেন না; এটি শুধু চুলের লেন্থ ও আগায় ব্যবহার করুন।
৮. সঠিক অনুপাতে শ্যাম্পু ব্যবহার না করা
শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্পে সমানভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার না করলে কিছু অংশ অপরিষ্কার থেকে যায়। এর ফলে স্ক্যাল্পে বিল্ড আপ ও খুশকির সমস্যা বাড়ে।
সমাধান: শ্যাম্পু পুরো স্ক্যাল্পে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন এবং আঙুলের সাহায্যে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
৯. গ্রিজি বা তেলতেলে চুলে একবারেই শ্যাম্পু করা
তেলতেলে বা খুব ময়লা চুলে একবার শ্যাম্পু করলে সব ময়লা দূর হয় না। এতে চুল অপরিষ্কার থেকে যায় এবং জটলা তৈরি হতে পারে।
সমাধান: খুব ময়লা বা তেলতেলে চুলে দুইবার শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। প্রথমবার ময়লা দূর করুন এবং দ্বিতীয়বার চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে শ্যাম্পু করুন।
১০. খুব গরম পানি দিয়ে হেয়ার ওয়াশ
গরম পানি চুলের প্রাকৃতিক তেল সরিয়ে দিয়ে চুল রুক্ষ করে তোলে। এটি চুলের কিউটিকল খুলে দেয়, ফলে চুল আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সমাধান: হেয়ার ওয়াশের সময় ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। এটি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
হেয়ার ওয়াশের সঠিক নিয়ম
হেয়ার ওয়াশে চুলের ক্ষতি কমাতে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুন:
- শ্যাম্পুর আগে চুল আঁচড়ানো: শ্যাম্পুর আগে চুল আঁচড়ালে জটলা কমে এবং শ্যাম্পু করা সহজ হয়।
- ডাইলুট করা শ্যাম্পু ব্যবহার: শ্যাম্পু সরাসরি ব্যবহার না করে পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি চুলে কম ক্ষতি করবে।
- স্ক্যাল্প ফোকাস: শুধুমাত্র স্ক্যাল্পে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। চুলের লেন্থের জন্য আলাদা শ্যাম্পু দরকার নেই।
- পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার: শ্যাম্পু ধোয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করে চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করুন।
- শ্যাম্পুর পরে কন্ডিশনার: কন্ডিশনার চুলকে মসৃণ ও স্বাস্থ্যবান রাখতে সহায়তা করে।
চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে অতিরিক্ত টিপস
- উচ্চ মানের প্রোডাক্ট ব্যবহার: ভালো মানের অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
- হেয়ার মাস্ক বা তেল ব্যবহার: সপ্তাহে একবার হেয়ার মাস্ক বা তেল ব্যবহার করুন। এটি চুলকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।
- সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু: প্রতিদিন শ্যাম্পু করা এড়িয়ে চলুন। এতে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়।
- গরম বাতাস এড়িয়ে চলুন: চুল শুকানোর জন্য ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করলে গরম বাতাস এড়িয়ে চলুন। কুল সেটিং ব্যবহার করুন।
এই ভুলগুলো এড়িয়ে চললে আপনার চুল থাকবে ঝলমলে, স্বাস্থ্যবান এবং ড্যামেজমুক্ত। চুলের যত্নে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করুন এবং ভালো মানের হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট বেছে নিন।